এবিএনএ : ছেলেদের ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গই হলো টাই বা গলা বন্ধনী। বর্তমানে এর ব্যবহার কেবল আনুষ্ঠানিক পরিবেশে স্যুট-ব্লেজারেই সীমাবদ্ধ নেই, টাই হয়ে উঠেছে নিত্যদিনের অনুষঙ্গ। শার্ট এমনকি টি-শার্টের সঙ্গেও তরুণ বয়সীদের কাছে বাহারি টাইগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে টাই পরার আগে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। এক্ষেত্রে শরীরের গড়নের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। কারণ গড়নের সঙ্গে ব্লেজারটি যদি ঠিকঠাক না মেলে, তাহলে টাইয়ের সৌন্দর্যটা ফুটে উঠে না। আবার টাইয়ের রঙও কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। এর রঙ একটি নির্দিষ্ট সংকেত পাঠায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, টাইয়ের রঙ আপনার ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে। একই স্যুটের সঙ্গে বিভিন্ন রঙয়ের টাই একজন মানুষ সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন বার্তা পাঠায় দর্শকদের কাছে। তাই নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য টাইয়ের রঙ বাছাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
গড়ন ভেদে মানানসই টাই
শারীরিক আকৃতির সঙ্গে টাইয়ের আকৃতি মানানসই হতে হবে। তবেই টাইয়ের আসল সৌন্দর্য ফুটে উঠবে। যারা একটু মোটা, তারা খানিকটা চ্যাপ্টা গোছের ছোট টাই বেছে নিন। যারা লম্বা গড়নের, তাদের চাপা ও খানিকটা লম্বা টাই ভালো মানাবে।টাই নির্বাচনে রঙটাও কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ টাইয়ের রঙ হয়ে উঠতে পারে আপনার ব্যক্তিত্বের মূর্ত ভাষা। চিরায়ত রঙ সাদা ও কালোর বাইরে নীল, গোলাপি, সবুজও বেছে নিতে পারেন। তরুণ বয়সীদের গাঢ় রঙ, মাঝারি বয়সীদের হালকা রঙ ও বয়স্কদের উজ্জ্বল রঙে মানায় ভালো।
এবার জেনে নিন কোন রঙয়ের টাই কোন ধরনের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে-
ক্ষমতাবানের প্রতিচ্ছবি লাল
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন বিশ্লেষক মার্ক উডম্যান বলেছেন, ‘লাল এর মধ্যে এমন কিছু আছে, যা সব সময় ক্ষমতা ও অধীর আগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’ একটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো, বিশ্বের অনেক রাজনীতিবিদই হালকা রঙয়ের শার্ট ও গাঢ় স্যুটের সঙ্গে লাল রঙয়ের টাই পরেন। তবে লালের মাত্রাটা পার্থক্য সৃষ্টি করে। গাঢ় লাল বা টকটকে লাল টাই বিশ্বাস স্থাপন করাতে সাহায্য করে। আর হালকা লাল বা গোলাপি রং নিজের ব্যক্তিগত স্টাইল প্রকাশ করে, যা সৃজনশীলতার দিকে ইঙ্গিত করে। তবে গত দশক থেকে গোলাপি টাই মাঝে মাঝে নারীর প্রতি সংহতি প্রকাশেরও সংকেত বহন করে।
রাজকীয় রঙ বেগুনি
ঐতিহ্যগতভাবে রাজকীয়তা ও অর্থ-প্রতিপত্তির পরিচায়ক বেগুনি রঙ। সাধারণত কর্মক্ষেত্রে এই রঙয়ের টাই বেশি গ্রহণযোগ্য। পুরুষরা সাধারণত হালকা বেগুনি রঙয়ের শেডের শার্ট এবং গাঢ় বেগুনি রঙয়ের শেডের টাই পরিধান করেন। হাজার মানুষের মধ্যে নিজেকে কিছুটা সাহসী হিসেবে প্রকাশ করার জন্য এর যে কোনো একটি বেছে নেওয়ার বিকল্প নেই।
উদ্ধত ভাব প্রকাশ করে কালো
কোনো এক্সিকিউটিভ মিটিংয়ে আপনি কালো রঙয়ের টাই নিয়মিত না পরলেও কোনো পার্টিতে বা বিশেষ কোনো ডিনারে কালো টাই পরতে পারেন। এটি আপনাকে আধুনিকতার অনুভূতি দেবে। তবে কালো টাই পরার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ ফরমাল কালো টাই অনেক সময় উদ্ধত ভাব প্রকাশ করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতি বেশভূষাও মনে হয়। যদি কর্মক্ষেত্রে এখনও অনেক উপরে উঠার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে কালো রঙয়ের টাই এড়িয়ে চলুন। তবে বিশেষজ্ঞরা এও বলেছেন, ধূসর শেডের টাই তুলনামূলক বেশি মানানসই। এমন টাইয়ে দাম্ভিক ভাব প্রকাশ করা না, তবে ঠিকই আধুনিকতার ছোঁয়ায় পরিপাটি মনে হয়।
সবুজ টাইয়ে আকর্ষণীয়
সবুজ রঙ অনেক কিছুই বোঝায়। এটি দ্বারা একদিকে পুনর্জন্ম বোঝায়। আবার অন্য দিকে কোনো কোনো দেশে টাকার রঙ বোঝায়। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, এটা অতি মাত্রায় দৃষ্টি-আকর্ষণকারী হয়ে যায়। তবে আপনি যদি চান টাইয়ের রঙয়ের কারণে কেউ আপনাকে স্মরণ করুক, তাহলে ঠিক সবুজ রঙ বেছে নেয়াটা ঠিক হবে না। বিশেসজ্ঞদের মতে, উজ্জ্বল সবুজ যেমন বিরক্তিকর লাগে, তেমনি এর সঙ্গে মিলিয়ে স্যুট বা শার্ট পাওয়াও কঠিন। তবে হালকা সবুজের সঙ্গে সূক্ষ্ম ছাপার টাই অন্য কোনো রংয়ের শার্টের সঙ্গে পরিধান করতে পারেন।
আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হলুদ
ইংল্যান্ডসহ বেশ কিছু দেশে ঐতিহ্যবাহী টাইয়ের রঙ হলুদ। এটি দীপ্তি ও জীবনীশক্তির সঙ্গে আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করে। সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করার সময় হলুদ রঙয়ের টাই পরতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও আশাবাদী মনোভাব প্রকাশ করে হলুদ রঙয়ের টাই। তবে বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে দেশভেদে টাইয়ের রঙ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। কারণ ভারতে হলুদ রঙয়ের টাই পরলে তাকে বণিক মনে করা হয়। আর চীনে শোকের সময় সাদা রঙয়ের টাই পরা হয়।
নিরাপদ রং নীল
টাইয়ের রঙয়ে ভুল বার্তা পাঠানোর ভয়ে পড়ে গেলেন? তাহলে সব চিন্তা বাদ দেন। যে বার্তাই পাঠাতে চান না কেন, নীল রঙয়ের টাই বেছে নেন। নীল রঙ মানুষকে আকাশ ও সমুদ্রের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ফলে মানুষের মনকে শান্ত করে দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, নীল রং পরিধান করাই সবচেয়ে নিরাপদ। ডিজাইন করা নীল টাই আপনার মধ্যে প্রফেশনাল অনুভূতি যোগাবে। বৈশ্বিক ব্যবসার ক্ষেত্রেও কোনো ধরনের ভুল বার্তা দিবে না। এক্ষেত্রে সূক্ষ্ম নীল টাই বোঝায় আপনি কোমল ও অন্তর্বীক্ষণপ্রবণ, অন্যদিকে গাঢ় নীল বোঝায় আপনি অসাধারণ একজন।’
অন্য রঙ
বিক্রয়কর্মী, শিক্ষক, সেবা প্রতিষ্ঠানের মানুষের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে তামা, বাদামি, মাটি, গোলাপি-কমলা বা হলুদ রঙ বেছে নিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন, বাদামি রঙয়ের টাই যদি একেবারে মিহি মনে না হয়, তাহলে সেটা নিষ্প্রভ ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে। কর্মক্ষেত্রে পদন্নোতির আশা থাকলে মাটি রঙয়ের শার্টের সঙ্গে মাটি রঙয়ের টাই একেবারেই এড়িয়ে চলুন।